প্রফেসর, ডঃ মাহজাবিন হক
2019/03/20

প্রফেসর, ডঃ মাহজাবিন হক

চেয়ারপার্সন,

শিক্ষা ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


মধ্যবয়সী নারীর মানসিক স্বাস্থ্য

 

সাধারণত ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সের নারীকে মধ্যবয়সী নারী বলা হয়ে থাকে। এই বয়সে একজন নারীর শারীরিকমানসিক ও সামাজিক পরিবর্তনের কারনে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় তাকেই মধ্যবয়সের সঙ্কট বা ইংরেজীতে মিডলাইফ ক্রাইসিস বলা হয়ে থাকে।  

মধ্যবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে সঙ্কটগুলো কি কি ধরনের হয়ে থাকে তা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। নারীদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের প্রধান কারন হিসাবে হরমোনকে দায়ী করা হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টরন এই দুটো হরমোনের কারনে আমাদের মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট দেখা দেয়। এই হরমোন মূলতঃ আমাদের ডিম্বাশয়ে তৈরি হয়। শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে এই সময়ে ঋতুস্রাব স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া উল্লেখযোগ্য যাকে ইংরেজীতে মেনোপজ বলা হয়। যখন ঋতুস্রাব ১ বছর পর্যন্ত টানা বন্ধ থাকে তখন তাকে রজঃনিবৃতি বা ইংরেজিতে মেনোপজ বলা হয়। মেনোপজের বয়স সীমা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সাধারণত ৪৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে ৫০ এর মধ্যে যে কোন সময়ে হতে পারে। এই ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার বিষয়টি আসলে একদিনে হয়না। প্রথমে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে থাকে তারপর একসময় বন্ধ হয়ে যায়।  

যেহেতু মেনোপজ হলে আর ডিম্বাণু তৈরি হয় না তাই ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টরন হরমোনের উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। মেনোপজের সাথে সাথে একজন নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাও লোপ পায়। যেহেতু সে  আর গর্ভধারণ করতে পারবে না সেহেতু সে ভাবতে পারে যে স্বামীর কাছে তাঁর মুল্য কমে গেছে। তাঁর মনে ভয় জমতে পারে যে এতে করে তাঁর স্বামী অন্য নারীতে আকৃষ্ট হতে পারে। এই সময়ে হঠাত গরম লাগা বা হঠাত ঠান্ডা লাগার অনুভুতি হতে পারে। রাতে ঘাম হওয়া, ঘুমের সমস্যা, ওজন বেড়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর সাথে শুষ্ক যৌনাঙ্গ নারীদের যৌন আকাঙ্খা কমিয়ে দিতে পারে। এর সাথে আবেগের এর ওঠা-নামা, খিটখিটে মেজাজ তাঁর মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি ও হতাশা তৈরি করতে পারে। তবে সবার বেলাতেই যে এগুলো হবে তা নয়।  

কিন্তু একজন নারী যদি খুব সহজভাবে বিষয়গুলিকে মেনে নেন যে এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেমন একজন নবজাতক জন্মের পরে শৈশবে প্রবেশ করে তারপর বাল্যকালে, সেখান থেকে বয়ঃসন্ধি হয়ে কৈশোরে প্রবেশ করে তারপর যৌবনে উপনীত হয়। এভাবেই কালের পরিক্রমায় বিকাশের নানা স্তর পেরিয়ে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যাক্তি হিসাবে যুবা থেকে মধ্য বয়স এবং পরিশেষে বার্ধক্যে পৌঁছায়। এটাই জীবনের স্বাভাবিক পরিক্রমার ঘটনা। মনে রাখতে হবে যে কোন বয়সই মূল্যহীন নয়। প্রত্যেক বয়সেই আমাদের কিছু করার থাকে।

একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে যৌবনকালই হচ্ছে মানুষের জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। একজন নারী যদি মনে করে যে মেনোপজের কারনে তাঁর উৎপাদনশীলতা শেষ হয়ে যাচ্ছে তবে সেটা ভুল ধারণা।  ওভারী থেকে হরমোন নিঃসরণ হচ্ছে না ঠিকই তবে অন্য হরমোনগুলো  ব্রেইন থেকে তো ঠিকই তৈরি হচ্ছে। নারী যদি তাঁর জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য খুঁজে পায় তবে সে মানসিক ভাবে অনেক শক্তিশালী বোধ করবে ও জীবনের নানা চাপ সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করতে পারবে। প্রত্যেকে যদি তাঁর আগ্রহের বিষয়টি খুঁজে পায় তবে তাঁর হতাশা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কমে যাবে। মনে রাখতে হবে কাজ করতে গেলে বয়স কোন বাঁধা নয়। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে মাত্র। তখন বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। ইতিবাচক মনোভাব থাকলে বাঁধা অতিক্রম করে জীবনের আনন্দ খুঁজে নেওয়া খুবই সম্ভব। মনে রাখতে হবে জীবনে নানা রকম ঘাত প্রতিঘাত আসতে পারে। সন্তানেরা বড় হয়ে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, পরিবারে কারো মৃত্যু হতে পারে- এভাবেও জীবনে শুন্যতা আসতে পারে তাঁর জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। নিজেকে সুস্থ্য আর প্রানবন্ত রাখার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহন, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ধ্যান বা মেডিটেশন করা, যোগ ব্যায়াম করা, ধর্মীয় কাজে প্রশান্তি পাওয়া, কোন শখের কাজ করা, পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করা, বেড়াতে যাওয়া, সমাজের জন্য কিছু করা ইত্যাদির মাধ্যমে মধ্য বয়সে একজন নারী তাঁর শুন্যতা পুরন করতে পারেন ও ভালো থাকার চাবিটা নিজের হাতে রাখতে পারেন।

 

Read More